#GlobalMayDay2022 কর্মসূচির ডাক !
বিশ্বজুড়ে আমরা যারা মজুরি নির্ভর শ্রমিক, তাদের অতিরিক্ত মূল্য উৎপাদন বজায় রাখার প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে হয়।আমরা চাই বা না চাই, বাসস্থান, লিঙ্গ, জাতীয়তা নির্বির্শেষে আমরা একই লড়াইয়ে সম্পৃক্ত। বাজেটে সামাজিক খাতের জন্য বরাদ্দ কমানো, আউটসোর্সিং, মজুরি হ্রাস, বেসরকারীকরণ, শিক্ষা সহ জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস এসব আমাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কিছু লক্ষণমাত্র। এই ব্যবস্থা যা শোষণ এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে টিকে আছে তা আমাদের জীবনের প্রতিটা দিককেই বানিজ্যিকরণ দিকে ঠেলে দেয়। আমরা কাজ বা পারফর্ম করার চাপে ভুগছি, পাশাপাশি আমরা যাদের সাথে কাজ করছি বা জীবন যাপন করছি তাদের থেকে এবং আমাদের জরুরত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণাতেও ভুগছি। সেটা আমাদের কর্মক্ষেত্র হোক, বিশ্ববিদ্যালয় হোক, বা এমনকি আমাদের শৈশব বা যৌবনকাল হোক। বাজার অর্থনীতির নিয়ম (যুক্তি) এবং তার অনুগামী জাতি রাষ্ট্রের কাঠামো মুক্তিকামী সক্ষমতাসমূহ বিকাশের চেয়ে প্রতিযোগীতামূলক নিয়মের সাথে অভিযোজন ও মূল্য-সংযোজিত উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিতে চায়।
বিশ্বজুড়ে একটি সার্বজনীন সাধারণ আয়ের (ইউনিভার্সেল বেসিক ইনকাম) প্রবর্তন শ্রম-মজুরির সম্পর্ক অতিক্রম করার দিকে প্রথম মুক্তিমুখীন ধাপ হতে পারে। আমরা শুধুমাত্র এই ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে চাই না; আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে চাই।
এই বছর আমরা মনযোগ দিতে চাই জলবায়ু সংকটের দিকে যার মুখোমুখি আমরা সবাই হচ্ছি। এই সংকটটা তৈরি হয়েছে পুজিবাদীদের লাভের হার বাড়ানোর স্বার্থে। এই সংকটের কারণে দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ বাঁধবে এবং আমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে গরীব তারাই সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ভুগবে। পুঁজিবাদীদের নিয়ন্ত্রনাধীন বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থা এবং শ্রমপদ্ধতি দিয়ে এই সংকট পার হওয়া অসম্ভব। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট দুনিয়াজুড়ে থাকা শ্রমিক শ্রেণীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। আমাদের আর কোন পৃথিবী নেই। সবকিছু আবার শুরু করার উপায় নেই, এ থেকে পালাবার মত কোন পরিকল্পনা নেই। কেবল ভবিষ্যত-ই আছে আমাদের। আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং সেটা আমাদের শ্রমিক শ্রেণির উপরই নির্ভর করছে যে, আমাদের ভবিষ্যত মানুষের বসবাসের যোগ্য হবে কিনা।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক চরিত্রের কারণে শ্রমিকদের জন্য বৈশ্বিক স্তরে যুক্ত হওয়া জরুরি।
যে বৈশ্বিক আন্তঃসংযোগসমূহ আমাদের স্থানিক অবস্থাকে গড়ে তুলে সেগুলোকে দৃশ্যমান করা সম্ভব সীমান্তগুলো পেরিয়ে পরস্পর-সংযুক্ত পথের সমন্বয়ের মাধ্যমে।শ্রম শোষণ এবং ঝুকিপূর্ণ শ্রম পরিবেশ এবং ঝুকিপূর্ণ বাসস্থানের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রেও এটা নতুন সব সম্ভাবনা এবং কাজের সুযোগ তৈরী করে। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ক্ষমতাও ভীষণভাবে বাড়ানো সম্ভব যদি মূল্য সংযোযনের একই প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাই দুনিয়াজুড়ে যুক্ত হতে পারে।
বিশেষভাবে জাতীতবাদ এবং বর্ণবাদের এমন সময়ে আমরা নিজেদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর কৌশল প্রতিরোধ করে সকলের অভিন্ন সংগ্রামের পথ খুঁজতে চাই।
সকলের তরে একটি উন্নত জীবনের তাগিদে – সমস্ত সীমানা পেরিয়ে!
#1world1struggle #GlobalMayDay2022
পরিবেশের ধ্বংস সাধন এবং শ্রেণী সংগ্রামের উপর অতিরিক্ত আলোচনা
অফুরন্ত পুঁজি বিকাশের উন্মত্ত প্রকল্পের হাতিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ।
বন উজাড়, খরা, ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুতি, রোগ, দারিদ্র্য এসবই হচ্ছে ভূমি দখলের সাম্রাজ্যবাদী ও উপবেশিক কায়দা, মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রের চাইতে কর্পোরেশনের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণমাত্রার বৈশ্বিক সামরিকীকরণের পরিণাম। আমাদের গ্রহ এবং দুনিয়াজুড়ে থাকা লাখো শ্রমিকের জীবনে এই ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। হাজারো মানুষ জীবনযাপনের তাদের বুনিয়াদি উপায়কে হারিয়েছে, হাজারো মানুষকে একটু রোজগারের জন্য নিজ ভিটা ছেড়ে দেশান্তরি হতে হয়েছে, হাজারো মানুষ খনি উত্তোলনের কাজের পরিবেশ এবং দূষণে জীবনব্যাপী রোগে ভুগছে। পৃথিবীজুড়ে স্বল্প আয়ের দেশগুলির কৃষি শ্রমিক এবং আদিবাসীদের অর্থনীতির উপর পরিবেশ দূষণের গভীর প্রভাব পড়ছে, এবং আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের হার বাড়ছে। আমাদের পিতৃতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে নারীরা শিক্ষা, জমি, পানি এবং চিকিৎসা সেবার মত সম্পদের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই তাদেরকে টিকে থাকার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আরো বেশি নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নারীদের উপর পড়ে। খাবার পানির জন্য তাদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়, এতে করে ঝুকির মধ্যে পড়ে তাদের স্বাস্থ্য। যৌন সহিংসতার হয়রানির শিকার হবার ঝুঁকিতেও পড়তে হয় তাদের।
পুঁজিবাদ এই গ্রহ ধ্বংস করছে, আমাদের জীবিকা, আমাদের বেঁচে থাকার সব উপায়কেও বিনাশ করছে। “বিকল্প পরিবেশগত রুপান্তর” এর নিউ গ্রিন ডিলের নব্যউদারবাদী ধারণা এই সত্যের উপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো নয় যে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। নিউ গ্রিন ডিল বরঞ্চ পুরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আড়াল করে দেয়। এটা এমন এক জরুরি অবস্থা যেখানে শ্রমিকদের দুনিয়াজুড়ে সংগঠিত হতে হবে এবং পুঁজিবাদী শ্রেনীর স্বার্থ যা কিনা এই জলবায়ু সংকট তৈরী করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এই সঙ্কট দারিদ্র্যের মতো বৈষম্যমূলক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে; সম্পদে সীমিত প্রবেশাধিকার রয়েছে এমন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত বর্ণের সম্প্রদায়, অভিবাসী ও নিম্ন আয়ের কর্মীদের ওপর পদ্ধতিগত বর্ণবাদ চাপিয়ে দেয়।
যেসব শিল্প শ্রমজীবী সমাজকে বৈষম্যমূলকভাবে আক্রান্ত করে তাদের ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর জন্য শ্রমিক-ভিত্তিক কৌশল দাঁড় করানোতে তৃণমূল পর্যায়ের ও বৈপ্লবিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ; তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে ও তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
অর্থনৈতিক উৎপাদনের জীবাশ্মজ্বালানীকেন্দ্রিক মডেলকে মোকাবেলা করতে আমাদের জমিন এবং জীবিকার দখল ফেরত নিতে হবে। সেই সাথে মানুষের কার্যকলাপ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে যার ভিত্তি হবে কার্বন মুক্ত ভবিষ্যতের দিকে ন্যায্য রুপান্তর।
যেহেতু কাঁচামাল এবং শক্তি উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা এবং অভাব অনিবার্যভাবে যুদ্ধ এবং সংঘর্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়বে, সেহেতু শ্রম প্রত্যাহার ও বৈশ্বিক ধর্মঘটে উৎপাদন বন্ধ করার ক্ষমতায় সজ্জিত শ্রমিক শ্রেণীকে আন্তর্জাতিকতাবাদী, সামরিকতা বিরোধী এবং শ্রেণী সংহতিতে সংগঠিত হতে হবে; যেন পুঁজিবাদকে পরাস্ত করা যায় এবং সকলের জন্য জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমষ্টিগতভাবে অগ্রসর হওয়া যায়; যেন আমাদের ভবিষ্যৎ ও আমাদের মঙ্গল আমাদের হাতেই থাকে।
Call initiated by: FOB (Brazil), SAC (Sweden), IWW (Ireland), CGT (Spain)

3 comments